লন্ডন থেকে মামুনুর রশীদ
রাত জেগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রথম খেলা দেখতে বসার কিছুক্ষণ পরেই সবার আগে যেই কথাটা মাথায় আসলো, সেটা হচ্ছে, ” সদ্য সমাপ্ত লিজেন্ডস টুর্নামেন্টে খেলা বিশাল গামলার মতো ভুড়িঁওয়ালা আফতাব আহমেদকে কি জাতীয় দলে আবার সুযোগ দেয়ার জন্য একটা আন্দোলনের ডাক দেয়া যায় কি না?”
আফতাবের ভুড়িঁর যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে তাকে অনেক কষ্ট করে সুতা দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে, না হলে যে কোন সময় উড়ে যাবে। একজন রিটায়ার্ড খেলোয়াড় হিসাবে তার শারীরিক এই অবস্থা দোষণীয় কিছু নয়, বরং তাকে আবার জাতীয় দলে খেলতে দেখা আমার ইচ্ছাটাই দোষের।
এখনো বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ আশরাফুল কে আবার জাতীয় দলের জার্সিতে দেখতে অধীর আগ্রহী। বুঝুন একবার অবস্থাটা, আমাদের বর্তমান খেলোয়াড়েরা মনমতো পারফর্ম করতে না পারলেই আমাদের মনে উঁকি দেয় সেই কবে হঠাৎ ২/১ ম্যাচে আলোর ঝলকানি দেয়া আশরাফুল, অথবা রিটায়ারমেন্টে যাওয়া আফতাব!
কিন্তু কেন এই অবস্থা? আমাদের তো তাকানোর কথা ছিল সামনের দিকে! আমার ভুল না হয়ে থাকলে আমরা বিশ্বের তৃতীয় অথবা চতুর্থ ধনী ক্রিকেট বোর্ড, আমাদের শক্ত একটা অবকাঠামো থাকার কথা, পাইপ লাইনে একগাদা অপেক্ষমাণ খেলোয়াড় থাকার কথা। টাকার দিকে আমরা একদম ক্রিকেটের ইউরোপ – আমেরিকা হয়েছি, অথচ আমাদের খেলার ফলাফল আর ভবিষ্যৎ ক্রিকেটের দিকে তাকালে মনে হয় কড়াইল বস্তি!
তো সাকিব আল হাসান খারাপ কি বলছে?
সাকিব বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্যাডবয়, সেটা সর্বজন বিদীত কিন্তু সে আমাদের ক্রিকেট কে কম কিছু দেয় ও নি। বোর্ডে থাকা সাবেক খেলোয়াড়দের খেলোয়াড়ী জীবন আর পারফরম্যান্স নিয়ে তো সাকিব কোন কথা বলেনি, সে তাদের সাংগঠনিক পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করেছে। তো সেখানে দোষের কি আছে? হ্যাঁ সেক্ষেত্রে আপনি দুটো প্রশ্ন করতে পারেন –
১. বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় এমন বলা ঠিক কিনা?
২. সে মিডিয়ার সামনে এগুলো বলার আগে কি তাদের সাথে কি ব্যাক্তিগতভাবে কথা বলা যেতোনা?
এই প্রশ্নগুলো অন্যকে করার আগে, নিজেকে করলেই উত্তর পেয়ে যাওয়ার কথা!
বোর্ডে চুক্তিবদ্ধ থেকে মাশরাফি কখনো কিছু বলেনি, অবস্থা কি তাতে বদলেছে? মিডিয়ার সামনে না বললে এসব ঘটনা দুনিয়ার কে জানতো সেই গুটিকয়েক ইতর ছাড়া!
আফগানিস্তান – জিম্বাবুয়ে – ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত – গরীব আর উপেক্ষিত বোর্ডগুলো ও আমাদের চেয়ে বেশী গুছানো, বেশী প্রফেশনাল। যার ফলাফল এখন খেলার মাঠেই দেখা যায়। আমাদের বোর্ড কর্মকর্তাদের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত কারো কথা শুনলে কি মনে হয় যে এরা প্রফেশনাল? যে কোন ইস্যুতে এদের কথা শুনলে তো মনে হয় এরা পাড়া মহল্লার ক্লাব কর্মকর্তা। এমনকি সারাবছর অন্যদের নাম ও তেমন শোনা যায়না, বোর্ড সভাপতি ছাড়া! অথচ, সারা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর বোর্ডের আর তাদের কর্মকর্তাদের কাজকর্ম গুলোর একটু খোঁজ নিলেই যে কেউই এসব জিনিস বুঝতে পারবেন, পার্থক্য গুলো ধরতে পারবেন।
মাশরাফির মতো দেশ বরেণ্য খেলোয়াড় পর্যন্ত তার বিদায় অনুসঠান টুকু ভালোভাবে পাননি, শুধুমাত্র এসব কর্মকর্তাদের অপেশাদারীত্বের কারণে।
– আমাদের দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে সারাদিন রাত চিৎকার করবেন কিন্তু বোর্ডের পক্ষ থেকে পাবেন কবরস্থানের নীরবতা।
– আমাদের পাইপ লাইনের খেলোয়াড়দের অবস্থা জানতে চাইবেন – সেখানেও শুনশান নীরবতা!
কিন্তু কোন খেলোয়াড় তাদের সম্বন্ধে কিছু বললেই এলাকার মাস্তান বড় ভাইদের মতো শুরু করে হালুম হুলুম।
খেলোয়াড়েরা যখন বুঝে যায় ভালো পারফরম্যান্স না করেও দলে টিকে থাকা যাবে, তখন আর তাদের উন্নতি র কোন আকাঙ্ক্ষা থাকে না। অথবা লিংক থাকলে ভাংগাচুড়া মার্কা ঘরোয়া লিগে ২/৩ ভালো পারফরম্যান্স দিয়েই জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া যাবে জানলে কে আর এত ঝামেলার জড়াতে চায়, সেক্ষেত্রে চুপচাপ বোর্ড কর্তাদের অকর্ম মুখ বন্ধ করে মেনে নেয়াই লাভজনক।
কিন্তু সাকিব – মাশরাফি বরাবর ই অন্য ধাতুতে গড়া জিনিস। সাকিব তো কিছুদিন পরপরই শিরোনামে আসেন এসব কথা বলে, এবার বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ না থাকায় ম্যাশ ও মুখ খুলেছেন। তার সাক্ষাৎকার ও আসছে শীঘ্রই!
বাংলাদেশের সব খেলাধুলা ধ্বংস হয়ে গেছে, এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রচুর টাকা – সাথে ক্রিকেট নিয়ে আমাদের উম্মাদনা মনে করিয়ে দেয় ৮০/৯০ দশকের ফুটবলের উন্মাদনার কথা। কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের কর্মকর্তাদের জন্য ফুটবল হারিয়ে গিয়েছে আমাদের দেশ থেকে, এখন ক্রিকেট ও সেই পথে হাঁটতে শুরু করেছে।
বড় বড় টুর্নামেন্টে বোর্ডের সব কর্মচারীরা ফ্রি ফ্রি বিদেশ সফর দিবে, কেউ কেউ ক্যাসিনো তে গিয়ে ভাত ডাল খাবে; তখন খেলোয়াড়েরা তো সেলফি আর ঘুরে বেড়ানোতেই বেশী মনোযোগ দিবে – এ আর আশ্চর্যের কি!
এসব দূর্নীতিবাজ, গোঁয়াড়, অপেশাদার কর্মকর্তাদের সরিয়ে মাশরাফি – সাকিবদের মতো ক্রিকেট বুঝমান – পেশাদার কর্মকর্তা যতদিন বোর্ডে না আসবে ততদিন শুধু রাজনীতিবিদ দের মতো মিথ্যা আশ্বাস আর জোকারদের মতো হাস্যকর বানী ই শুনবেন। ওহ আর এসব বিরক্তি থেকে বাঁচাতে কালেভদ্রে আমাদের ২/১ জয় ও উপহার দিবে আমাদের খেলোয়াড়েরা।
আপাতত এতেই সন্তুষ্ট থাকুন…
আরও পড়ুন : ইংল্যান্ডে তৈরি হচ্ছে দুই ভাইয়ের স্বপ্নের মসজিদ